আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে মাদারীপুর জেলার কিছু বিদ্যানুরাগীর উদ্যোগে এলাকার অনগ্রসর ও অবহেলিত নারী সমাজের শিক্ষা বিস্তার ও প্রসারের লক্ষ্যে পদ্মার শাখা নদী আড়িয়াল খাঁ বিধৌত হযরত শাহ মাদার (র) এর প‚ণ্যভ‚মিতে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মাদারীপুর মহিলা কলেজ। তৎকালীন নবগঠিত মাদারীপুর জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক জনাব আব্দুর রশিদ এবং স্থানীয় বিদ্যানুরাগীদের প্রবল উৎসাহে বিশেষ করে তৎকালীন মাদারীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব নুরুল আলম বাবু চৌধুরী'র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ অক্লান্ত পরিশ্রমে ঐতিহ্যবাহী মাদারীপুর শকুনী লেকের দক্ষিণপাড়ে মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে মানবিক শাখায় ১৫৯ জন ছাত্রী নিয়ে কলেজটি অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু করে। অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু করলেও এ কলেজটিকে আর থেমে থাকতে হয়নি। বিশ্বায়নের প্রভাবে যখন সমগ্র দেশের অনগ্রসর ও অবহেলিত নারী সমাজের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষা বিস্তার ও প্রসারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তারই প্রভাবে ১৯৮৬ সালে মহিলা কলেজটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাদারীপুর জেলারই কৃতি সন্তান ও বিদ্যানুরাগী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী আবুল খায়ের চৌধুরীর দানকৃত অর্থে তারই মাতা সুফিয়া বেগম এর নামে এবং জনাব সাহাদাত হোসেন (তোতা) হাওলাদারের দানকৃত জমিতে ডা: গোলাম মাওলা সড়কে হযরত শাহ্ মাদার (র) দরগাহ শরীফ ও ঐতিহ্যবাহী ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী স্থানে প‚র্ব ছায়াঘেরা, পাখি ডাকা সবুজ শ্যামল পরিবেশে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান "মাদারীপুর সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজ"। স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার পর পরই কলেজটি মাদারীপুর জেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নেয়। এরপর ১৯৮৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখা এবং স্নাতক (পাস) শ্রেণি খুলে এ এলাকার নারী শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবী ও কাক্সিক্ষত স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটানো হয়। উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) পরীক্ষায় বরাবরই এই কলেজের ছাত্রীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে আসছে।
১৯৯৭ সালে কলেজটি প‚র্ব সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণের পর থেকে অভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষক মÐলী ও নবাগত মেধাবী শিক্ষকবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ছাত্রীদের শিক্ষা মানের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে কলেজটির কাঠামোগত অনেক উন্নতি সাধিত হয়। ফলে তিনতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, তিনতলা বিশিষ্ট ফরিদা বেগম একাডেমিক ভবন এবং ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সুরম্য হাজেরা হাওলাদার ছাত্রী নিবাস নির্মিত হয়। সুপ্রশস্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী, প্রধান ফটক, গার্ড শেড ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে অব্যাহত রয়েছে। আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি ৬ তলা একাডেমিক ভবন এর প্রকল্প চলমান রয়েছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গী হিসেবে কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।